প্রকাশিত: Fri, Dec 1, 2023 4:12 PM আপডেট: Sat, Dec 6, 2025 6:19 PM
[১]সান্তাহারে চিকিৎসক সংকটে ২ হাসপাতালের বেহাল দশা
এএফএম মমতাজুর রহমান, আদমদীঘি (বগুড়া): [২] বগুড়ার সান্তাহার একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন স্টেশন। রেলওয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় ভৌগলিক কারণে এ জংশন স্টেশনে গড়ে উঠেছে ১২-১৩টি কেপি আই প্রতিষ্ঠান। এ জন্য এ জংশন শহরের গুরুত্ব অনেক বেশী। গুরুতপূর্ণ এ শহরে ২টি হাসপাতাল রয়েছে। একটি জনসাধারণের জন্য ২০ শয্যা বিশিষ্ট ও রেলওয়ে চাকরিজীবীদের জন্য রয়েছে ১৩ শয্যা বিশিষ্ট আরও একটি হাসপাতাল। কিন্তু ২টি হাসপাতলেরই এখন বেহাল দশা। বৃটিশ আমলে নির্মিত উপজেলার সান্তাহার জংশন স্টেশনে অবস্থিত সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালটি। তীব্র জনবল সংকটে ভুগছে হাসপাতালটি। [৩] ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালটিতে কোন চিকিৎসক ও অনান্য পদে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়েছে। একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। প্রাচীন এই হাসপাতালটির অবকাঠামো নড়ভরে। হাসপাতালের সামনে কয়েকটি ভাঙাচোড়া অব্যবহারিত এবং অপরিস্কার ভবন দাঁড়িয়ে আছে। [৪] পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের চিকিৎসাসেবা, দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে দ্রুত গিয়ে আহত রোগীর সেবা প্রদান, বিভিন্ন হাসপাতালে আহত রোগীদের খোঁজখবর রাখা, রেলওয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীদের পথ্য ও খাদ্য সরবরাহ করা এবং দুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য সর্বক্ষনিকভাবে আ্যম্বুলেন্স গাড়ি প্রস্তুত রাখার জন্য রেলওয়ে হাসপাতাল তৈরি করা হয়। [৫] বর্তমানে সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালটিতে চিকিৎসক নেই, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স নেই, মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট নেই, পরীক্ষাগার নেই, আ্যম্বুলেন্স নেই, উন্নত ওষুধ নেই, ইনডোর সেবা নেই। হাসপাতালটির মঞ্জুরীকৃত ২৭ জন জনবলের স্থানে আছে মাত্র ৮জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কাগজে কলমে ২২ শয্যা মজ্ঞুরী থাকার কথা থাকলে বর্তমানে আছে ১৩ শয্যা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ইনডোরে কোনো চিকিৎসা সেবা না থাকায় রোগী ভর্তি হয় না। [৬] হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ২ জন চিকিৎসকের বিপরীতে একজনও কর্মরত নেই। চিকিৎসকের অনুপস্থিতে একজন ফার্মাসিস্ট শুধু রোগীর বিবরণী শুনে ওষুধ দেয়। ইনডোর সিষ্টার ইনচার্য একজন, কম্পিউটার অপারটের পদে একজন, একজন ড্রেসারার, একজন বাবুর্চি ও একজন মেডিসিন ক্যায়িয়ার কর্মরত আছেন। হাসপাতালটিতে সেনিটারি ইন্সপেক্টর ও জামাদার পদে নেই কোন জনবল। দুইজন খালসীর স্থলে আছেন একজন। [৭] হাসপাতালটির ড্রেসারার আব্দুল মান্নান জানান, কোনো চিকিৎসক না থাকায় একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে আউটডোর চালু রাখা হয়েছে। হরিজন সম্প্রদায়ের লোকবল সহ দিনে ৩০/৪০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা ও বিনামুল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এ ব্যাপারে পাকশি রেলওয়ে বিভাগীয় মেডিক্যাল অফিসার (ডিএমও) ডাঃ শাকিল আহমেদ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালটির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, অনান্য জনবল নিয়োগ সহ নানা প্রকার সুপারিশ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ে সহ নানা হাসপাতালে প্রচুর জনবল সংকট আছে। এর মধ্যে দুই হাজার জনবল রিক্রুটমেন্টের প্রক্রিয়া চলমান আছে। অন্যান্য জনবল সংকটের চেষ্টা চলছে। [৮] জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় স্টাফ কোয়ার্টারসহ হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ২০২১ সালে কাজ শেষ হয়। দুই দফায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সান্তাহারবাসীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে হাসপাতালের মূল ভবন, স্টাফ কোয়ার্টারসহ নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থাপনা। অবকাঠামো নির্মাণের পর হাসপাতালটিতে মঞ্জুরীকৃত জনবলের মধ্যে সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে ৪জন কনসালট্যান্ট, ১জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, একজন মেডিকেল অফিসার, ৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, ১জন ফার্মাসিস্ট, ১জন হিসাবরক্ষক ও ওয়ার্ডবয়, অফিস সহায়ক, এমএলএসএস সহ বিভিন্ন পদে ১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ডাক্তার-নার্স ও জনবল নিয়োগের পর স্বাস্থ্যসেবা পেতে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়। সরজমিনে হাসপাতালে দেখা যায়, কাগজকলমে ২৩ জনবল নিয়োগ দেয়া হলেও ডাক্তার-নার্স কেউই নেই। ডাক্তার না থাকায় কোনো রোগীও নেই। উপস্থিত দায়িত্বপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট আবদুল মান্নান জানান, ‘এখানে ডাক্তার-নার্স বলতে আমিই সব। অন্য কেউ নেই।
[৯] আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ফজলে রাব্বী বলেন, সান্তাহারে ১ জন ডাক্তারসহ ৯ জন কর্মরত থাকলেও কাজ না থাকায় তাদের আদমদীঘি উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এই হাসপাতালে ইনডোর চিকিৎসাসেবা চালু করতে হলে প্রয়োজনীয় ডাক্তার-নার্সসহ মঞ্জুরীকৃত জনবল, অপারেশন, এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি পরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি,রোগীদের বিছানাপত্র,অন্যান্য আসবাব ও অ্যাম্বুলেন্স দরকার। আমরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃক্ষকে লিখেছি। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালটি চালু করা হবে।
[১০] সান্তাহার সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দিন বলেন, হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যসেবায় গৃহীত বিভিন্ন সুবিধা থেকে এলাকার জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, এলাকায় সামান্য প্রাথমিক সেবাও পাওয়া যায় না। জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তার দেখাতে নওগাঁ সদর অথবা বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। যা স্থানীয় রোগীদের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টদায়ক। এতে সময় ও বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয়। স্থানীয়দের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতালটি জরুরি ভিত্তিতে চালু করা প্রয়োজন।
[১১] বগুড়া সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ শফিউল আজম বলেন, ‘হাসপাতালটি চালু করার জন্য আমি প্রয়োজনীয় জনবলকাঠামো, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ও আসবাব চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপজেলা হেলথ কেয়ার বিভাগে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। সবকিছু পাওয়া গেলে আশা করি অবিলম্বে ২০ শয্যার হাসপাতালটির কার্যক্রম পুরোদমে চালু করা যাবে।